কেন একই যোগ্যতা থাকার পরও ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন অংকের বেতন দেয়? কিভাবে আপনার চেয়ে ১০ বছরের ছোট ছেলেটা আপনার চেয়ে বেশি বেতনে জয়েন করল?
বেতনের ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি নাকি দক্ষতা, কোনটিকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়?
এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের এই পোস্ট। আজকে এখানে আমি ব্যাখ্যা করেছি বেতন নির্ধারণের মূল ৫ টি ফ্যাক্টর, যেগুলো বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বেই সাধারনভাবে চর্চা করা হয়।
কোন একটি কোম্পানিতে কার বেতন কত হবে, সেটা আসলে নির্ভর করে অনেকগুলো ফ্যাক্টরের ওপর। আর নিয়োগকারী কোম্পানি কোন ফ্যাক্টরকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সেটাও আপনার বেতনের অংকে প্রভাব ফেলতে পারে।
যেকারনে একই সমান অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পরও দুটি ভিন্ন কোম্পানিতে দু’জনের আলাদা অংকের বেতন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
তবে একটি আদর্শ কোম্পানিতে সাধারণত কিভাবে কোন এমপ্লোয়ির বেতন নির্ধারণ করা হয়, সেটা জানা থাকলে ব্যাপারটা বুঝতে সবার সুবিধা হবে। আসুন দেখা যাক কিভাবে সেটা করা হয়।
ফ্যাক্টর # ১
কোম্পানির ব্রান্ড ভ্যালু এবং ব্যবসার সুনাম
যেকোন কোম্পানির জন্যই ব্রান্ড ভ্যালু এবং মার্কেটে তাদের ব্যবসার সুনাম একটি অমুল্য সম্পদ।
এজন্যই আপনার যোগ্যতা নয়, বরং বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় কোম্পানিগুলো প্রথমেই বিবেচনা করে নিজেদের ব্রান্ড ভ্যালু এবং বাজারে তাদের সুনাম কতটা, সেটা।
উচ্চ ব্রান্ড ভ্যালু এবং বাজারে সুনামধারি কোম্পানিগুলো খুব সহজেই বাজারের সেরা কর্মীদের আকর্ষণ করতে পারে।
এমনকি অপেক্ষাকৃত কম বেতনেও অনেকেই এইসব কোম্পানিতে কাজ করতে রাজি থাকে।
এই ক্ষেত্রে বেতনের টাকার অংক নয়, বরং নামধারি বড় কোম্পানিতে কাজ করার সম্মানটাই বড় হয়ে দেখা দেয়।
আর কোম্পানিগুলোও এই বিষয়টি জানে। সেকারণে, বড় কোম্পানিগুলো বেশি বেতন দিয়ে নয়, বরং নিজেদের ব্রান্ড এবং সুনাম বাড়িয়ে বাজারের সেরা কর্মীদের সবসময় আকর্ষণের চেষ্টা করে।
অন্যদিকে, সেরা কর্মী আকর্ষণের জন্য অন্যান্য কোম্পানিগুলোর প্রধান অস্ত্র হচ্ছে আকর্ষণীয় অংকের বেতন।
আর সেটা করতে গিয়ে অনেক সময় তারা নিজেদের নির্ধারিত রেঞ্জের চেয়েও বেশি বেতন অফার করে।
যেকারনে, বাস্তব জীবনেই দেখতে পাবেন, অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চেয়ে লোকাল কোম্পানিগুলো বেশি বেতন অফার করছে।
আর একারনেই, একই সমান যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা নিয়েও দুটি ভিন্ন কোম্পানিতে দু’জনের বেতন দুই রকমের হয়।
আপনি হয়ত কোন নামধারি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করেন, কিন্তু আপনারই বন্ধু লোকাল কোম্পানিতে কাজ করেও কিন্তু ঠিকই আপনার চেয়ে বেশি বেতন পায়! আর কিভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে, তা নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে গেছেন!
ফ্যাক্টর # ২
বাজারে আগ্রহী কর্মীর সংখ্যা এবং চাহিদা
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। আপনি যে শহরে কাজ করতে চান, যদি সেখানে চাকরির চাহিদার তুলনায় কর্মীর যোগান বেশি হয়, তাহলে আপনি খুব বেশি বেতন পাবেন না।
বেকারত্ব বেশি এমন দেশ বা শহরের জন্য এটা একটা কমন সমস্যা।
শহরে যদি কর্ম উপযোগী ট্যালেন্টের সংখ্যা অনেক বেশি হয় আর সে তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে যদি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি না হয়, তাহলে চাকরি দাতার হাতে অনেক অপশন চলে আসে।
চাকরিদাতা তখন অপেক্ষাকৃত কম বেতনেই চাকরি করতে ইচ্ছুক এমন অনেক লোককে পেয়ে যায়।
তাই এরকম পরিস্থিতিতে বেশি বা প্রিমিয়াম বেতনে সাধারণত কেউ চাকরি অফার করে না।
আবার এর উল্টোটাও সত্যি।
ধরুন, আপনার শহরে যদি এমন অবস্থা হয়, যে শহরে যে কজন হিসাববিদ আছে তার তুলনায় সেখানকার কোম্পানিগুলোতে হিসববিদের চাহিদা অনেক বেশি আছে, তাহলে বুজতেই পারছেন, এমন পরিস্থিতিতে কি ঘটবে।
হ্যা, ঐ শহরে হিসাববিদরা অনেক বেশি ডিমান্ডিং হবে এবং তারা অনেক বেশি বেতনে চাকরির সুযোগ পাবে।
এমনকি এক্ষেত্রে অনেক হিসাববিদ হয়ত কোম্পানিগুলোর সাথে বেতন নিয়ে দেন-দরবার করারও সুযোগ পাবে, আর বাগিয়ে নেবে প্রিমিয়াম স্যালারি।
এখন আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখুন, আপনি কোন অবস্থায় আছেন। আপনার কাজের ক্ষেত্র কি ওভার পপুলেটেড হয়ে পড়েছে? হয়ে থাকলে বিকল্প চিন্তা করুন অথবা নিজের দক্ষতা বাড়ান।
ফ্যাক্টর # ৩
অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা
শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা আপনার কাজ পাওয়ার জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তবে বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে অতটা নয়।
কেননা আপনার মত একই রকম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী সব সময়ই অনেক থাকবে কারণ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই সঙ্গে অনেককে একই ডিগ্রি দিচ্ছে।
তবে অভিজ্ঞতার কারণে আপনার বেতনের হের-ফের হতে পারে। কেননা সবসময় নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক পাওয়া যায় না।
আবার আপনার দেশে বা শহরে যদি কোন নির্দিষ্ট ডিগ্রি ধারি চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়, এই যেমন ধরেন এমবিএ ডিগ্রি, তাহলেও সেই ডিগ্রির চাহিদা সম্পন্ন চাকরিতে কম বেতনের অফার থাকবে।
তবে কারও যদি অতি উচ্চ মানের ডিগ্রি থাকে, যেমন পিএইচডি, তাহলে সে বেতন নিয়ে দর- কষাকষির সুযোগ নিতে পারে।
ফ্যাক্টর # ৪
পারফর্মেন্স
বেতনের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে পারফর্মেন্স । এর আবার দুটি দিক রয়েছে।
প্রথমটি হচ্ছে, আপনি যে কোম্পানিতে চাকরি করতে চাচ্ছেন বা করছেন, সেই কোম্পানির ব্যবসায়িক পারফর্মেন্স।
কোম্পানি যদি ব্যবসায় ভাল করে, তাহলে অবশ্যই কর্মীদের ভাল বেতন অফার করে। কিন্তু কোম্পানির নিজের পারফর্মেন্সই যদি খারাপ হয়, তাহলে সেই কোম্পানি থেকে ভাল বেতন আশা না করাই ভাল।
কোম্পানির ব্যবসায়িক পারফর্মেন্সের পর দেখা হয়, কর্মীর তথা আপনার নিজের পারফর্মেন্স। এক্ষেত্রে আপনি যদি চাকরিরত অবস্থায় থাকেন তাহলে কোম্পানি আপনার অতীত পারফর্মেন্স বিবেচনা করবে আপনার বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে।
আর আপনি যদি একেবারে ফ্রেশার হন, তাহলে আপনার সম্ভাব্য উৎপাদনশীলতা বিবেচনা করে আপনাকে বেতন অফার করবে।
সুতরাং ভালো বেতনের চাকরি পেতে হলে, আপনাকে ভালো ব্যবসায়িক পারফর্মেন্সের কম্পানিতে যেতে হবে।
ফ্যাক্টর # ৫
জীবন যাপনের ব্যয়
বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিতর্কিত ফ্যাক্টর হচ্ছে এটি।
অনেকে কোম্পানিই বিশেষ করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এই ফ্যাক্টরটির অপব্যবহার করার অনেক অভিযোগ আছে।
সেকারনেই, বিশ্বের ব্যয়বহুল শহরগুলোতে অপেক্ষেকৃত বেশি বেতন পাওয়া যায়।
কিন্তু মাঝারি মানের ব্যয়বহুল শহরগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক সময়ই কোম্পানিগুলো সঠিকভাবে বিবেচনা করে না।
সেকারনে এই শহরগুলোতে চাকরিরত অনেকেই শহরের ক্রমবর্ধমান জীবন-যাত্রার ব্যয়ের সাথে তাল মেলাতে হিমশিম খায়।
আবার কোন শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় কত, সেটা নির্ধারণকারী কতৃপক্ষ যদি হিসেবে ভুল করে বা সঠিক ভাবে নিয়মিত হিসাব প্রদান না করে তাহলে এই ফ্যাক্টরটির অপব্যবহারের সুযোগ কোম্পানিগুলোর হাতে চলে আসে।
অন্যদিকে কোন দেশে যদি জীবনযাত্রা ব্যয় খুব ঘনঘন ওঠানামা করে তাহলেও কোম্পানিগুলোর জন্য তা সমস্যা হয়ে দেখা দেয় বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে।
আজকে এপর্যন্তই। আপনার যদি বেতন নির্ধারণের আরাও কোন ফ্যাক্টরের কথা যদি জানা থাকে তাহলে সেটা আমাদের কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।
বিষয়টি ভালভাবে বুঝতে নিচের ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত জানান।