শেয়ার বাজার বা Stock Market - এ বিনিয়োগ করে ধরা খেতে না চাইলে আপনাকে অবশ্যই কিছু বেসিক নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করতে হবে।
কেননা, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে যারা ধরা খেয়েছেন, তাদের একটা বড় অংশ এই মার্কেটে বিনিয়োগের বেসিক নিয়ম গুলো জেনেই বিনিয়োগ করে ফেলেছিলেন। শেয়ার বাজার একটি উচ্চ ঝুকি পূর্ণ স্পর্শকাতর জায়গা। তাই এখানে বিনিয়োগ করতে হয় বুঝে শুনে, গুজবের উপর ভিত্তি করে নয়।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের কিছু বেসিক নিয়ম আছে, যেগুলো বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই জানেন না অথবা বিনিয়োগের সময় সেগুলো প্রয়োগ করেন না।
এরফলে তাদের বিনিয়োগ থেকে যায় ঝুঁকিপূর্ণ এবং বাজারের সামান্য উত্থান-পতনেই তাদের বিনিয়োগ নেমে আসে শুন্যের কোটায়।
তাই শেয়ার বাজারে ভাল কোম্পানিতে দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপদ এবং টেকসই বিনিয়োগ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বেশ কিছু বেসিক বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
কিন্তু কি সেই বিষয় গুলো? - এই নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে এই পোস্টে।
আজকের এই লেখায় আমি আপনাদের জানাব, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের এমন ৫ টি অব্যর্থ টেকনিক, যেগুলো না জেনে বিনিয়োগ করা কখনই উচিৎ হবে না।
আর এই টেকনিক গুলো সার্বজনীন, অর্থাৎ এগুলো যেকোন দেশের যেকোন শেয়ার মার্কেটের জন্যই প্রযোজ্য।
তাই যদি আপনি শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের কথা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই বিষয়গুলোতে নজর দিন।
মূলত শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক বিনিয়োগ করতে চাইলে আপনাকে এমন কোম্পানি বাছাই করতে হবে, যা আপনাকে যৌক্তিক রিটার্ন দেবে। এ জন্য বিনিয়োগের আগে কোম্পানি বাছাইয়ে আপনাকে কিছু বিষয় ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।
আসুন জেনে নেই এমন ৫ টি অব্যর্থ টেকনিক যা শেয়ার বাজারে আপনার বিনিয়গকে শক্তিশালী করবে।
টেকনিক # ১
কোম্পানির ইপিএসের (EPS) প্রবৃদ্ধি
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য আপনি যখন কোন কোম্পানি বাছাই করবেন, তখন প্রথমেই দেখতে হবে সেই কোম্পানির ইপিএসের (EPS) তথ্য। ইপিএস মানে হচ্ছে আরনিং পার শেয়ার (Earning per Share) বা শেয়ার প্রতি আয়।
ইপিএসের মাধ্যমে কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে একজন বিনিয়োগকারী সম্যক ধারণা পায়। তাই শেয়ারবাজারের কোনো কোম্পানির মুনাফা বোঝার জন্য শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস (EPS) একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
তাই কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে ওই কোম্পানির বিগত পাঁচ বছরের ইপিএস পর্যালোচনা করুন। তাতে ইপিএসের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি রয়েছে কি না, সেটা ঠিকমত যাচাই করুন ।
আপনি যে স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ করতে চান, সাধারণত সেখানকার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই যেকোনো কোম্পানির ইপিএসের তথ্য পাওয়া যায়। তাই বিনিয়োগের আগেই সেই সমস্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করুন।
মনে রাখবেন, ইপিএস (EPS) যত বেশি হবে, ততই ভাল।
টেকনিক # ২
আরওআই (ROI) বা মূলধনের বিপরীতে আয়
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য দ্বিতীয় যে বিষয়টি আপনার পর্যালোচনা করতে হবে সেটি হচ্ছে ঐ কোম্পানির আরওআই (ROI)।
আরওআই (ROI) মানে হচ্ছে রিটার্ন অন ইক্যুইটি (Return on Equity) বা মূলধনের বিপরীতে আয় ।
কোনো কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ করা অর্থের বিপরীতে কোম্পানিটি কি পরিমাণ নিট মুনাফা করছে, তা জানা অত্যন্ত জরুরি। আর সেটি বোঝা যায় কোম্পানির রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) বা মূলধনের বিপরীতে আয় থেকে।
শেয়ারহোল্ডারদের টাকা একটি কোম্পানি কতটা দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করছে, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে আরওইতে। কোনো কোম্পানির ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের আগে ওই কোম্পানির আরওই ভালোভাবে পর্যালোচনা করা উচিত।
সাধারণ নিয়ম হলো, কোম্পানির আরওই (ROI) অবশ্যই মূলধনের চেয়ে বেশি হতে হবে। আর বিনিয়োগকারীরা কোনো কোম্পানির ইক্যুইটি বিনিয়োগ করলে তার বিপরীতে বছর শেষে ন্যূনতম ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ রিটার্ন বা মুনাফা না পেলে ওই বিনিয়োগ লাভজনক হয় না। তাই মূলধনের তুলনায় কোনো কোম্পানির আরওই (ROI) যদি ১৮ শতাংশ বা তার বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে কোম্পানিটির ব্যবসা ভালো চলছে।
আর দীর্ঘ সময় ধরে একটি কোম্পানির আরওই (ROI) বেশি হওয়া মানে, ঐ কোম্পানির বাজার প্রতিযোগিতায় ভালোভাবে টিকে থাকার কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে, অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় ওই কোম্পানিকে এগিয়ে রেখেছে।
কোন কোম্পানির আরওআই (ROI) বিষয়ক তথ্য জানতে আপানাকে সেই কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন দেখতে হবে। কেননা এই প্রতিবেদনেই এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
টেকনিক # ৩
বেশি মূলধন, কম ঋণ
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের তৃতীয় টেকনিকটি হচ্ছে এমন কোম্পানি খুঁজে বের করা, যার মূলধনের চেয়ে ঋণের পরিমাণ কম। অর্থাৎ মুলধন বেশি, কিন্তু ঋণ কম।
মূলধনের বিপরীতে ঋণ কম এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করাই নিরাপদ। কোনো কোম্পানির ঋণ যদি মূলধনের ১ শতাংশের মধ্যে থাকে, তবে সেটা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু মূলধনের দেড় শতাংশের বেশি ঋণ আছে এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করাই ভালো।
মনে রাখতে হবে, যেসব ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বেশি এবং মুনাফার হার কম, সেসব ব্যবসার ক্ষেত্রে বিপুল ঋণ কোম্পানির জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। কেননা , ঋণের সুদ কোম্পানির মুনাফা কমিয়ে দেয় এমনকি কোম্পানিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানও বানিয়ে ফেলতে পারে।
টেকনিক # ৪
উদ্যোক্তার ব্যবসায়িক খ্যাতি বা সুনাম
বিনিয়োগের ৪ নাম্বার টেকনিকটি হচ্ছে উদ্যোক্তা বা মালিকদের ব্যবসার খ্যাতি বা সুনাম সম্পর্কে ধারনা রাখা।
কেননা বিনিয়োগের জন্য এটা জানা খুব জরুরি যে, কে বা কারা কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতিষ্ঠাতাদের হাতে কোম্পানির কী পরিমাণ শেয়ার বা অংশীদারত্ব রয়েছে এবং পরিচালনা পর্ষদ কাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে।
সমাজে ও ব্যবসায়িকভাবে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সুনাম কেমন, সেটি বিবেচনায় নেওয়া খুবই জরুরি।
ব্যবসায়ী হিসেবে যাঁদের যথেষ্ট সুনাম আছে, ভালোভাবে ব্যবসা ও কোম্পানি পরিচালনার ইতিহাস রয়েছে এবং যেসব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন যথেষ্ট স্বচ্ছ এবং সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারের প্রতি যাঁদের সম্মান ও দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেসব উদ্যোক্তার কোম্পানিতে বিনিয়োগ অনেক নিরাপদ।
টেকনিক # ৫
কম পি.ই (PE) রেশিও দেখে শেয়ার কেনার সময়ই লাভ করা
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সর্বশেষ টেকনিকটি হচ্ছে , শেয়ার কেনার সময়ই লাভ করা, বিক্রির সময়ের অপেক্ষা না করা। অর্থাৎ একজন বিনিয়োগকারীকে এটা নিশ্চিত হতে হবে যে, ভালো শেয়ার তিনি বেশি দামে কিনছেন না।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্য আয় অনুপাত বা পি.ই (PE) রেশিও একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
শেয়ারের বাজারমূল্যকে ইপিএস (EPS) দিয়ে ভাগ করে এই পি.ই (PE) রেশিও বের করা হয়।
ধরা যাক, কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ১২। তার মানে হলো, ওই কোম্পানির বর্তমান ইপিএসের ধারা অব্যাহত থাকলে একজন বিনিয়োগকারী ১২ বছরে তার বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত পাবেন।
সাধারণভাবে বলা যেতে পারে, যেসব কোম্পানির পিই রেশিও ২৫-এর বেশি, সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করাই ভালো।
আজ এ পর্যন্তই। তবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা নিয়ে আপনার যদি আরও কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা থাকে তাহলে তা আমাদের কমেন্ট করে জানান।
আর এই বিষয়টি আরও ভালভাবে বুঝতে নিচের ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন।
sonyshoeb6@gmail.com
উত্তরমুছুনআপনার কথা অনেক ভালো লেগেছে।
আপনার নাম্বার টা যদি দিতেন।
০১৭২৯৯১৪১৩৪
আপনি এই ব্লগে দেয়া যোগাযোগের ফরমে আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।
মুছুনচমৎকার। অতি সহজ সরল ভাবে উউপস্থাপন।
উত্তরমুছুনআপনার মতামত গুলো ভালো লাগল
উত্তরমুছুন