কিভাবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে ব্যবসা করতে হয়, সেটা অনেকেরই অজানা। বিশেষ করে নতুনদের জন্য শেয়ার বাজারে আগমনের পথটা সব সময়ই কঠিন। কেননা, শেয়ার বাজারে শুরুটা ঠিক কিভাবে করতে হয়, সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সবসময়ই অপ্রতুল।
শেয়ার বাজার বা স্টক মার্কেট সবসময়ই একটি উচ্চ ঝুঁকপূর্ণ জটিল জায়গা। তাই এখানে আসার আগে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু পড়াশুনা করে নূন্যতম জ্ঞান নিয়ে আসা উচিত। তা না হলে, শেয়ার বাজারে এসে টাকা খোয়ানো কেউ ঠেকাতে পারবে না!
তবে শুরুতেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই! কেননা বিখ্যাত বিনিয়গকারী পিটার লিঞ্চ যেমনটা বলেছেন, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য পৃথিবীর সব মানুষেরই যথেষ্ট বুদ্ধি-বিবেচনা বোধ রয়েছে। ক্লাস ফাইভের অংক করতে জানেন, এমন লোকও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য উপযুক্ত।
তবে কথা আছে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য একজন বিনিয়োগকারীর অবশ্যই যথেষ্ট ধৈর্য, প্রচেষ্টা এবং পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করার ইচ্ছা থকতে হবে। আর তাহলেই কেবল একজন বিনিয়গকারী সফল হওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
তাই আজকের এই লেখায়, আমি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করার বেসিক ধাপ গুলো নিয়ে আলোচনা করব। এই বিষয় গুলো জানাটা সব বিনিয়োগকারীর জন্যই খুবি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষকরে নতুনদের জন্য। আশাকরি পোস্টটি আপনাদের সবার উপকারে আসবে।
কিভাবে শেয়ার ব্যবসা শুরু করবেন?
শেয়ার ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমেই একজন ব্যক্তিকে যেটা করতে হবে সেটা হল, তার মেইন্ডসেট ঠিক করতে হবে। যেহেতু শেয়ার বাজার একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের জায়গা, তাই সবার আগে নিজের মনকে প্রস্তুত করতে হবে ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য।
গোঁটা পৃথিবীতেই এমন কোন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে এসে কখনও লস করেন নি, শুধুই লাভ করেছেন। এমন ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। তাই শেয়ার বাজারে এলেই দ্রুত বড়লোক হয়ে যাবেন, এমন চিন্তাভাবনা মন থেকে চিরতরে বিদায় করে তারপর শেয়ার ব্যবসা শুরু করতে হবে।
আপনি যদি ভাবেন যে, শেয়ার বাজার থেকে আপনি কেবল লাভই করবেন, আর এই আশায় মার্কেটে বিনিয়োগ করতে আসেন, তাহলে হয়ত দ্রুতই আপনাকে শেয়ার বাজার থেকে বিদায় নিতে হবে। কেননা, আপনি যখন দেখবেন, আপনার লোকসান হচ্ছে, তখন হয়ত আপনি মানসিকভাবে সেটা মেনে নিতে পারবেন না, আর তাই অস্থিরতাই আপনার কাল হয়ে দাঁড়াবে আর আপনাকে শেয়ার বাজার থেকে বের করে নিয়ে যাবে শুন্য হাতে।
আর শেয়ার ব্যবসাকে কখনই নিজের মাসিক আয়ের একমাত্র উৎস হিসেবে নেয়া যাবে না। কেননা এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রতিনিয়ত উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে যায়।
তাই শেয়ার ব্যবসা শুরু করতে চাইলে সবার আগে নিজের মাইন্ডসেট ঠিক করতে হবে। লোকসান মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। দ্রুত ধনী হওয়ার আশা ত্যাগ করতে হবে।
এগুলো যদি আপনি করতে পারেন, তাহলে আপনি শেয়ার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করার ধাপ গুলো কি কি?
মাইন্ডসেট ঠিক করার পর বিনিয়োগ শুরু করার জন্য প্রথমেই সিস্টেমেটিক কাজ গুলো সম্পন্ন করতে হবে। এরমানে হচ্ছে, আপনাকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে শেয়ার ব্যবসায় প্রবেশ করতে হবে।
এই প্রক্রিয়াটা হচ্ছে, শেয়ার বাজারে আপনার টাকা বিনিয়োগের জন্য, অর্থাৎ শেয়ার কেনা-বেচার জন্য আপনার একটি একাউন্ট লাগবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এটা বলা হয় বিও (BO) একাউন্ট বা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (Beneficiary Owner's) একাউন্ট।
অন্যদিকে ভারতের নাগরিকদের জন্য দরকার হবে একটি ট্রেডিং বা ব্রোকারেজ একাউন্ট এবং একই সঙ্গে একটি ডিম্যাট (ডিম্যাটেরিয়ালাইজড) একাউন্ট। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যেমন এনএসই (NSE) এবং বিএসই (BSE) তালিকাভুক্ত শেয়ার কেনা বেচা সহজতর করতে প্রয়োজন হয় ট্রেডিং একাউন্টের। অন্যদিকে শেয়ার সংরক্ষণ এবং জাল শেয়ারের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে প্রয়োজন হয় ডিম্যাট একাউন্টের।
টাকা-পয়সা লেনদেনের জন্য যেমন ব্যাংক একাউন্টের দরকার হয়, তেমনি শেয়ার বা স্টক লেনদেনের জন্য লাগে বিও একাউন্ট (ভারতে ট্রেডিং বা ব্রোকারেজ একাউন্ট এবং একটি ডিম্যাট একাউন্ট)।
কিভাবে বিও একাউন্ট খুলতে হয়, সেটা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। তবে সাধারণভাবে জানিয়ে রাখি, একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যা যা লাগে, বিও একাউন্ট খুলতেও মুলত তাই তাই লাগে। ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয় ব্যাংকে, আর বিও একাউন্ট খুলতে হয় কোন ব্রোকারেজ হাউজে অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে। আর বিও একাউন্টের জন্য অবশ্যই একটি ব্যাংক একাউন্টও থাকতে হবে।
বিও একাউন্ট তৈরী হয়ে গেলে আপনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে শেয়ার ব্যবসা করার জন্য সিস্টেমস্টিক্যালি প্রস্তুত হয়ে গেলেন।
এবারে আপনি আপনার শেয়ার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
শেয়ার ব্যবসা কিভাবে করতে হয়?
কিভাবে শেয়ার ব্যবসা করতে হয়, এই প্রশ্নের কোন সহজ উত্তর নেই। কেননা বিষয়টা খুবই জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, নিজের বিও একাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার কেনা-বেচা করার মাধ্যমেই এই ব্যবসা করতে হয়।
আর এই কেনা-বেচার মাধ্যমে সফলভাবে শেয়ার ব্যবসা করতে হলে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীরই অবশ্যই পর্যাপ্ত জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। কেননা পর্যাপ্ত জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা ছাড়া শেয়ার ব্যবসায় কখনো ভাল কিছু করা সম্ভব নয়।
কিন্তু নতুনদের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন শুরুতেই সম্ভব নয়। কেননা, অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় সময়ের সাথে সাথে। তাই একজন নতুন বিনিয়গকারীর যেহেতু অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকে, তাই তার উচিত, শেয়ার ব্যবসায় নামার আগেই যথেষ্ট পরিমাণ এ সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করা।
শুরুতে অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব না হলেও পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। তাই নতুনদের এদিকটায় যথেষ্ট মনোযোগ দিতে হবে।
শেয়ার বাজার সম্পর্কিত প্রাথমিক জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে, এ বাজার সম্পর্কিত বিশেষ বিশেষ টার্ম গুলো সম্পর্কে জানা। এই টার্ম গুলো জানা থাকলে একজন নতুন বিনিয়োগকারীর জন্য তার পরবর্তী যাত্রাপথ যথেষ্ট সহজ হয়ে যায়।
আসুন জেনে নেই এরকম কিছু প্রচলিত টার্ম।
প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (Initial Public Offering) বা আইপিও (IPO) : কোন কোম্পানি প্রথম শেয়ার বাজারে পা রাখতে চায়, তখন তাকে প্রাথমিক গণ প্রস্তাব বা আইপিও (IPO) এর মাধ্যমে শেয়ার ছাড়তে হয়। কেননা শেয়ার বাজারে ঢোকার এটাই একমাত্র পদ্ধতি। একদম শুরুতেই কোন কোম্পানি সরাসরি শেয়ার বাজারে তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারে না। শেয়ার বাজারে নিজেদের শেয়ার বিক্রি শুরু করার জন্য কোন কোম্পানি শুরুতেই বিনিয়োগকারীদেরকে তাদের শেয়ার কেনার একটি প্রস্তাব দেয়। আর এই প্রস্তাবই হল প্রাথমিক গণ প্রস্তাব বা আইপিও (IPO)।
প্রাইমারি শেয়ার : প্রাথমিক গণ প্রস্তাব বা আইপিও (IPO) এর মাধ্যমে যে শেয়ার গুলো বাজারে প্রবেশ করে, সেগুলোকেই বলা হয় প্রাইমারি শেয়ার। এই শেয়ার একটি কোম্পানি কেবল একবারই ছাড়তে পারে, আর সেটা হয় একেবারে শুরুতে প্রাথমিক গণ প্রস্তাব বা আইপিও (IPO) এর মাধ্যমে।
সেকেন্ডারি শেয়ার : প্রাইমারি শেয়ার গুলো বাজারে আসার পর, সেগুলো যখন আবার বিনিয়োগকারীরা নিজেদের মধ্যে কেনা-বেচা শুরু করে, তখন সেগুলোকেই বলা হয় সেকেন্ডারি শেয়ার। প্রাইমারি শেয়ারের চেয়ে সাধারণত সেকেন্ডারি শেয়ার বিনিয়োগকারীরা বেশি দামে কেনা-বেচা করে থাকেন। আর সেকেন্ডারি শেয়ার কেনা-বেচার এই মার্কেটকেই বলা হয় সেকেন্ডারি বাজার। প্রতিদিন শেয়ার বাজারের উত্থান-পতনের যে খবর আপনি দেখতে পান, সেটা মূলত এই সেকেন্ডারি বাজারেরই খবর।
শেয়ার ক্যাটেগরি : শেয়ার বাজারে ব্যবসা করতে নামলে প্রায়ই শুনবেন বিভিন্ন ক্যাটেগরির শেয়ারের কথা। মূলত বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গুলোকে বাজার কর্তৃপক্ষ কয়েকটি ক্যাটেগরিতে বিন্যস্ত করেছে বলেই এমনটা হয়ে থাকে। যাইহোক, বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের প্রধান ক্যাটেগরি গুলো হচ্ছে A, B, N এবং Z।
যেসব কোম্পানি নিয়মিত তাদের বার্ষিক সভা বা এজিএম করে এবং মিনিমাম ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ প্রদান করে, তাদেরকে A ক্যাটেগরভুক্ত করা হয়েছে। সাধারণভাবে এই ক্যাটেগরির কোম্পানি গুলোই ভাল কোম্পানি, তবে অবশ্যই ব্যাতিক্রম থাকতে পারে।
আর যেসব কোম্পানি নিয়মিত তাদের বার্ষিক সভা বা এজিএম করে কিন্তু ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ প্রদান করে, তাদেরকে B ক্যাটেগরভুক্ত করা হয়েছে।
নতুন যেসব কোম্পানি বাজারে প্রথম এসে লেনদেন শুরু করে, তাদেরকে রাখা হয়েছে N ক্যাটেগরিতে। সাধারণভাবে কোন একটি কোম্পানি বাজারে আসার পর তাদের প্রথম এজিএম না করা পর্যন্ত এই ক্যাটেগরিতে থাকে।
আর যেসব কোম্পানির অবস্থা খারাপ, অর্থাৎ ঠিকমত এজিএম করে না আবার লভ্যাংশও ঠিকমত দেয় না, তাদেরকে রাখা হয় Z ক্যাটেগরিতে। সাধারণভাবে এই ক্যাটেগরি মানেই খারাপ কোম্পানি, তবে অবশ্যই ব্যাতিক্রম থাকতে পারে।
ফেস ভ্যালু : এটা হচ্ছে কোন কোম্পানির শেয়ারের প্রাথমিক মুল্য। অর্থাৎ যে মূল্যে কোম্পানিটি শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয়, সেটাই সেই কোম্পানির ফেস ভ্যালু। আইপিওতে সাধারণত এই মুল্যেই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করা হয়।
তবে অনেক কোম্পানি আবার তাদের শেয়ারের ফেস ভ্যালুর সাথে অতিরিক্ত অর্থ প্রিমিয়াম হিসেবে নিয়ে থাকে। আইপিওতে তাই অনেক সময়ই প্রিমিয়ামসহ মোট মুল্যে বিনিয়োগকারীরা প্রাইমারি শেয়ার কিনে থাকেন।
কিন্তু কোন কোম্পানি যখন তার লভ্যাংশ ঘোষণা করে, তখন সেটা করে কোম্পানির শেয়ারের ফেস ভ্যালুর ওপর ভিত্তি করেই। প্রিমিয়াম সহ মোট মূল্যের ওপর লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয় না। অনেকেই এই হিসাবটি বুঝতে পারে না। তাই কোন শেয়ারের ফেস ভ্যালু কত, সেটা জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে বাংলাদেশের বাজারে এখন প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারেরই ফেসভ্যালু ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মার্কেট ভ্যালু : কোন শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু বলতে বুঝায়, সেই শেয়ারটির সর্বশেষ বাজার মূল্যকে। অর্থাৎ শেয়ার বাজারে কোন শেয়ার সর্বশেষ যে দামে কেনা-বেচা করা হয়েছে, সেটাই সেই শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু।
রেকর্ড ডেট : রেকর্ড ডেট হচ্ছে সেই বিশেষ দিন, যেদিন কোন কোম্পানির শেয়ারধারীদের কার কাছে কি পরিমাণ শেয়ার আছে, তা রেকর্ড ভুক্ত করা হয়। সেকেন্ডারি শেয়ার বাজারে যেহেতু প্রতিনিয়ত শেয়ারের হাত বদল হতে থাকে, তাই যখন কোন কোম্পানি শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সেই কোম্পানি তার শেয়ারধারী কারা এবং কার কাছে কি পরিমাণ শেয়ার আছে, সেটা জানার জন্য একটি বিশেষ তারিখ নির্ধারণ করে।
সেই বিশেষ দিনটিতেই যাদের কাছে সেই কোম্পানির যত শেয়ার থাকবে, তারা সে অনুযায়ী লভ্যাংশ পাবেন। রেকর্ড ডেটের আগে পরে যদি আপনার কাছে শেয়ার থাকে, কিন্তু সেই নির্দিষ্ট রেকর্ড ডেটের দিন না থাকে, তাহলে আপনি কোন লভ্যাংশ পাবেন না।
আর এজন্য যে কোম্পানির যেদিন রেকর্ড ডেট, সেদিন সেই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকে। যাতে শেয়ারের মালিকানা স্থিকভাবে নির্ধারণ করা যায়।
এজিএম (AGM) : কোম্পানির সাধারণ বার্ষিক সভা বা Annual General Meeting কে সংক্ষেপে এজিএম (AGM) বলে। এই সভাতেই কোম্পানি তার সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন করে এবং শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দেয়া হবে কি না তা ঠিক করে। লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হলে, তা কি পরিমাণে এবং কি আকারে দেয়া হবে, সেটাও এই সভাতেই ঠিক করা হয়। এই সভা প্রতি বছর একবারই হয়, এবং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডিভিডেন্ট (Dividend) বা লভ্যাংশ : এজিএমে কোন কোম্পানি যখন তাদের আয়-ব্যায়ের হিসাব অনুমোদন করে, তখন তারা যদি দেখে যে কোম্পানি লাভজনক অবস্থায় আছে, তখন তারা শেয়ারধারীদের মধ্যে লাভের অংশ বিতরণ করে। কোম্পানির প্রফিট থেকে পাওয়া শেয়ারধারীদের এই অংশটিকেই বলা হয় ডিভিডেন্ট বা লভ্যাংশ।
রাইট শেয়ার : বাজারে শেয়ার ছাড়ার পর কোন কোম্পানির যখন আবারও মূলধন বাড়ানোর দরকার হয়, তখন সেই কোম্পানি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ফেসভ্যাল্যুতে আবারও নতুন শেয়ার বাজারে ছাড়তে পারে। তবে এইবার সেই শেয়ার আর আইপিওর মত সবাই কিনতে পারে না।
এই শেয়ার কেবল তারাই কিনতে পারে, যাদের আগে থেকেই সেই কোম্পানির শেয়ার আছে। এজন্য এ ধরণের শেয়ারকে বলা হয় রাইট শেয়ার।
অথরাইজড ক্যাপিটাল (Authorized Capital) : এটি হচ্ছে কোন কোম্পানির মূলধন সর্বোচ্চ কত হবে, সেই অনুমোদিত লিমিট। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ এই অনুমোদন দিয়ে থাকে এবং তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক গৃহীত হতে হয়। কোম্পানি চাইলে তার মূলধন যেকোন সময় পরিবর্তন করতে পারে।
পেইড-আপ ক্যাপিটাল (Paid-up Capital) : এটা হচ্ছে কোন কোম্পানির অথরাইজড ক্যাপিটালের বিপরীতে কি পরিমাণ টাকা শেয়ার হোল্ডাররা পরিশোধ করেছেন, সেই এমাউন্ট। অর্থাৎ শেয়ার হোল্ডাররা যে পরিমাণ টাকা ইতোমধ্যে কম্পানিকে দিয়েছেন মূলধন হিসেবে, সেটাই হচ্ছে পেইড আপ ক্যাপিটাল।
নেট এসেট ভ্যালু (Net Asset Value) বা ন্যাভ (NAV) : কোন কোম্পানির কি পরিমাণ মোট সম্পদ আছে, সেটার হিসাব করে সেখান থেকে কোম্পানির যাবতীয় ঋণের পরিমাণ বাদ দিলে যে অংক থাকে, সেটাই হল সেই কোম্পানি নেট এসেট ভ্যালু বা NAV।
এই ন্যাভকে আবার কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে শেয়ার প্রতি সম্পদের পরিমাণ বের কারা হয়। যে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদের পরিমাণ যত বেশি, সেই কম্পানিকে সাধারণভাবে তত বেশি ভাল বলা যায়। তবে ব্যতিক্রম আছে।
আরনিং পার শেয়ার (Earning per Share) বা ইপিএস (EPS) : এটা হচ্ছে কোন কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয়। অর্থাৎ কোন কোম্পানি তার প্রতিটি শেয়ারের ফেসভ্যালুর বিপরীতে কত টাকা আয় করে সেটাকেই বলা হয় আরনিং পার শেয়ার বা EPS।
এই ইপিএস যত বেশি হবে, সেই কোম্পানি তত ভাল হবে। যার আয় বেশি থকবে, সে ব্যবসাও ভাল করবে, ার বিনিয়োগের জন্য সেটাই ভাল কোম্পানি বলে বিবেচিত হবে।
প্রাইস আরনিং রেসিও (Price Earning Ratio) বা পি ই রেসিও (P/E Ratio) : কোন কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্যকে সেই কোম্পানির বর্তমান ইপিএস দিয়ে ভাগ করলে যা পাওয়া যায়, সেটাই হল প্রাইস আরনিং রেসিও বা P/E Ratio। অর্থাৎ কোন কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু যদি বর্তমানে ১০০ টাকা হয়, আর সেই কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় যদি হয় ৫ টাকা, তাহলে সেই কোম্পানির পিই রেসিও দাঁড়াবে ২০। যার অর্থ, বর্তমান হারে আয় করতে থাকলে, সেই কম্পানিতে করা আপনার বিনিয়োগ তুলে আনতে ২০ বছর লাগবে।
এই রেসিও যত বেশি হবে, সেই কম্পানিতে বিনিয়োগ করা তত বেশি ঝুঁকি পূর্ণ হবে। যার পিই রেসিও যত কম, সে তত বেশি ভাল কোম্পানি বিনিয়োগের জন্য।
ইন্ডেক্স (Index) বা সূচক : এটা দিয়ে বাজারে সার্বিক অবস্থা বুঝানো হয়। যেকোন শেয়ার বাজারেরই এক বা একাধিক সূচক থাকে। এসব সূচক বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে গঠন করা হয়। যে সূচক যেসব কোম্পানি নিয়ে গঠিত, সেই সূচকের হ্রাস বা বৃদ্ধির সাথে বাজারের সেইসব কোম্পানির সার্বিক অবস্থা প্রতিফলিত হয়। সূচক সাধারণত বাজারে সার্বিক অবস্থাকেই তুলে ধরে, কোন কোম্পানি বিশেষের অবস্থাকে নয়।
গুরুত্বপূর্ণ টার্ম গুলো জানা হয়ে গেলে একজন বিনিয়োগকারীর জন্য পরবর্তী ধাপ হচ্ছে, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের কার্যকর পদ্ধতি সম্পর্কে জানা।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পদ্ধতি
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের কোন ম্যাজিক বা গ্যারান্টেড ফর্মুলা নেই। তাই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে হয় খুবই বুঝে শুনে, নিজের বুদ্ধিতে। অন্যের বুদ্ধিতে বিনিয়োগের ঝুঁকি নেয়া কখনই উচিত নয়।
তবে কিছু কিছু বিষয় আছে, যেগুলোর দিকে খেয়াল রাখলে মোটামুটি আস্থার সাথে বিনিয়োগ করা যায়। এমনই কিছু বিষয় সবারি জানা থাকে উচিত বিশেষ করে নতুন বিনিয়োগকারীদের।
১ # ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করাঃ টাকা থাকলেই একজন নতুন বিনিয়োগকারীর কখনই তা একসাথে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে হয় ধীরে ধীরে, বাজারে অবস্থা বুঝে।
২ # রিসার্চ করাঃ একজন বিনিয়োগকারী যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চায়, তার উচিত সেই কোম্পানি সম্পর্কে বিনিয়োগের আগেই ভালাভাবে রিসার্চ করা। বেসিক কিছু তথ্য, যেমন সেই কোম্পানির মালিক কারা, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন, কোম্পানির সুনাম কেমন, লেন-দেনের অবস্থা কি, কোম্পানির পণ্য বা সেবা বাজারে কেমন পাওয়া যায় এসব বিষয় সহজেই জানা যায়। তাই বিনিয়োগের আগেই এসব তথ্য যোগাড় করে নিতে হবে আর সে অনুযায়ী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এই বিষয়ে আরও জানতে দেখে নিতে পারেন- জটিল বিশ্লেষণ ছাড়াই ভাল শেয়ার বাছাই করার সহজ পদ্ধতি।
৩ # ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ না করাঃ শেয়ার বাজার যেহেতু খুবই ঝুঁকি পূর্ণ তাই, এখানে কখনই ঋণ করে বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। শেয়ার বাজারে কেবল সেই টাকাই বিনিয়োগ করা উচিত, যে টাকা লোকসান হলে বিনিয়োগকারীর তেমন কোন ক্ষতি হবে না।
৪ # বিনিয়োগকারীদের মনস্তত্ব বোঝাঃ শেয়ার বাজারে টিকে থাকতে হলে বিনিয়োগকারীদের মনস্তত্ব সম্পর্কে জানতে হবে। এটা না বুঝলে শেয়র বাজারে দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকা কঠিন হবে। কিভাবে এই মনস্তত্বকে বুঝতে হবে, সেটা নিয়ে এই ব্লগে অন্য একটি পোস্টে বিস্তারিত বলা আছে।
আগ্রহীরা চাইলে দেখে নিতে পারেন - পূঁজিবাজারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের জন্য দায়ী বিনিয়োগকারীদের 'মনস্তাত্বিক কারণ' আসলে কি?
৫ # কেন অন্য বিনিয়োগকারীরা টাকা হারায় সেটা জানাঃ শেয়ার বাজার খুবই ঝুঁকি পূর্ণ। তাই এখানে এসে সবাই কম-বেশি লোকাসান করে বা টাকা হারায়। তাই একজন বিনিয়োগকারীর বিশেষ করে নতুনদের উচিত, কেন অন্যরা শেয়ার ব্যবসা করতে এসে টাকা হারাচ্ছে সেটা খুঁজে বের করা।
বিনিয়োগের আগেই আপনাকে জানতে হবে, ঠিক কি কি কারণে ৯০% বিনিয়োগকারীই শেয়ার বাজারে এসে তাদের টাকা হারায়, সেই বিষয় গুলো।
শেয়ার বাজারে লাভ করার উপায়
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার যেমন কোন ম্যাজিক ফর্মুলা নেই, তেমনি এখানে এসে লাভ করারও কোন ম্যাজিক ফর্মুলা নেই। তবে পৃথিবীর বড় বড় বিনিয়োগকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বিভিন্ন সময় নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এসব পরামর্শ মানলে শেয়ার বাজার থেকে লাভ করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হতেও পারে।
১ # কেনার সময়ই লাভ করাঃ শেয়ার বাজারে লাভ করার প্রথম সুত্র হিসেবে বলা হয়, বেচার সময় নয়, বরং শেয়ার কেনার সময়েই লাভ করতে হবে। অর্থাৎ শেয়ার কেনার সময়ই এমনভাবে সবকিছু বিশ্লেষণ করে সঠিক দামে সঠিক শেয়ার কেনা, যেন পরবর্তীতে বেচার সময় লোকসানের আশঙ্কা কম থাকে।
২ # লং টার্ম বিনিয়োগের মানসিকতা থাকাঃ শেয়ার বাজার থেকে লাভ করার অন্যতম একটি পরীক্ষিত উপায় এটি। শেয়ার বাজারে এসেই লাভের চিন্তা না করে বরং লম্বা সময়ের জন্য বিনিয়োগ ধরে রাখার মানসিকতা থাকতে হবে। যারা দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করেন, দেখা যায় তারা খুব কমই ক্ষতির শিকার হন।
৩ # গুজবে কান না দেয়াঃ শেয়ার ব্যবসা যেহেতু খুবই ঝুঁকি পূর্ণ, তাই এ বাজার গুজবে পরিপূর্ণ। সেকারণে বিনিয়োগ করতে এসে কখনও গুজবে কান দেয়া যাবে না। গুজবের ওপর ভরসা করে কোন বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। সব সময়, সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলেই কেবল লাভের আশা করা যেতে পারে।
৪ # লোকসান মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকাঃ শেয়ার বাজারে লাভ করতে চাইলে আগে লোকসান মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকা চাই। যার এই মানসিকতা নেই, সে শেয়ার বাজারে বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। শুধু সব সময় লাভই করতে হবে, এমন মানসিকতা থাকলে শেয়ার বাজার থেকে খালি হাতে ফেরার সম্ভাবনাই বেশি!
৫ # শেয়ার বিশ্লেষণের দক্ষতা অর্জন করাঃ শেয়ার বাজারে লাভ করার শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে নিজের মধ্যে বিনিয়োগের জন্য শেয়ার বিশ্লেষণের দক্ষতা অর্জন করা। যে যত ভালভাবে বিশ্লেষণ করতে পারবে, তার লাভ করার সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে। এই দক্ষতা একদিনে তৈরী হয় না। তবে ভালভাবে পড়াশুনা করতে পারলে এরকম দক্ষতা দ্রুতই অর্জন করা সম্ভব।
এরকমই কিছু পরামর্শমূলক টেকনিক সব বিনিয়োগকারীরই জানা থাকা উচিত, বিশেষ করে নতুনদের। এ ধরণের পরামর্শমূলক শেয়ার ব্যবসায় মুনাফা করার অব্যর্থ টেকনিক সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে এই ব্লগের অন্যান্য পোস্টগুলো দেখে নিতে পারেন।
এছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন আমার ইউটিউব চ্যানেল, যেখানে বিনিয়োগ নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও নিয়মিত প্রকাশ করা হয়।
খুবই ভালো লাগলো
উত্তরমুছুনভাল লিখেছেন ভাই
উত্তরমুছুনভালো লাগছে
উত্তরমুছুন