প্রতিদিন অফিস যাতায়াত করতে কি আপনার বিরক্ত লাগে? অফিসে আসা-যাওয়া করতেই সব এনার্জি শেষ হয়ে যায়? ভাবছেন, চাকরিটা যদি বাড়িতে বসেই করা যেত তাহলে ভালই হত!
কিন্তু আসলেই এমনকি কোন চাকরি আছে, যেটা সত্যিই বাড়িতে বসেই করা সম্ভব?
আপনার মনে যদি এই প্রশ্ন থাকে, তাহলে উত্তরটা হচ্ছে, হ্যা, অবশ্যই আছে।
আপনি হয়ত ভাবছেন, ঘরে বসে কাজ করা মানেই তো হচ্ছে, অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং কিংবা আজগুবি সব সাইটে ক্লিক করে টাকা কামানোর সস্তা দাওয়াই! কিন্তু না, আজকে কোন অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা বলছি না। আজকে কথা বলব একদম রেগুলার জব নিয়ে, যেগুলো লোকে অফিসে বসেই করে, কিন্তু বাড়িতে বসে করলেও ফলাফলে কোন পার্থক্য হয় না।
ফ্রিল্যান্সিং করে অনেকেই অনেক অনেক ডলার ইনকাম করে বটে, কিন্তু সেটা ঠিক সবার জন্য নয়। তাছাড়া বিষয়টা সবার জন্য সহজও নয়।
আবার অনেকে চাকরি করতেই পছন্দ করেন, অনেকের ফ্যামিলিরও এমনটাই ইচ্ছা। কেননা এতে বলার মত একটা পরিচয় থাকে।
তবে প্রতিদিন সময় মেনে অফিসে গিয়ে কাজ করাটা আসলেই ঝামেলার। বাড়িতে বসেই যদি চাকরি করা যায়, তাহলে এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আপনার চিন্তা-ভাবনাও যদি এমন হয়, তাহলে আপনার জন্য সুখবর!
আজকে আমি আপনাদের সামনে এমন তিনটি চাকরির কথা তুলে ধরব, যেগুলো আপনি বাড়িতে বসেই করতে পারবেন। আগেই বলেছি, এগুলো কোন অনলাইন ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং জব নয়। এগুলো হচ্ছে রেগুলার জব, যা অনেকেই অফিসে বসে করে থাকে।
চাইলে এগুলোকে আপনার সেকেন্ড জব হিসেবেও নিতে পারেন, কেননা এই জব গুলো করার জন্য আপনাকে আপনার বর্তমান প্রতিষ্ঠানে ইস্তফা দিতে হবে না। আপনি একই কাজ অফিসে না গিয়ে শুধু বাসায় বসে করবেন, আর তাতে কোন রকম কোয়ালিটি কম্প্রমাইজ হবে না।
এই জব গুলোর জন্য আপনি যদি কোয়ালিফাইড হন, অথবা আপনি যদি বর্তমানেই এই কাজগুলো অফিসে বসে করে থাকেন, তাহলে আজই আপনার অফিস বসের সাথে কথা বলুন, আর তাকে আপনার ইচ্ছার কথা জানান। তবে অফিসে কোনদিন মিটিং থাকলে আপনাকে হয়ত সেদিন কষ্ট করে অফিসে যেতেই হবে, না হলে হয়ত চাকরিটাই চলে যাবে!
যাইহোক, আসুন এবার বাড়িতে বসেই করা যায় এমন জব গুলোর বিস্তারিত জেনে নেই।
এক.
এই তালিকার প্রথমেই আছে, কোয়ালিটি এয়াসিউরেন্স টেস্টার বা QA Tester। অনেকেই আবার এটাকে কোয়ালিটি এয়াসিউরেন্স টেকনিশিয়ানও বলে।
এই পদের মূল কাজ হচ্ছে বিভিন্ন সফটওয়্যার পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে দেখা। এই যেমন ধরেন গেমিং সিস্টেম সফটওয়্যার কিংবা মোবাইল এপ টেস্ট করে দেখা।
আপনি যদি QA Tester হন, তাহলে আপনার দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়বে, বিভিন্ন সফটওয়্যারের ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে বের করা, সেগুলো রিপোর্ট করা, সিস্টেম স্পেসিফিকেন্স পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণ করা।
এছাড়াও আরও কাজের মধ্যে আছে সফটওয়্যারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা, তার ফলাফল বিশ্লেষণ করা, আর প্রাপ্ত কারিগরি ত্রুটিগুলো ডকুমেন্টিং করা।
এই কাজটি হয়ত আপনাকে অটোম্যাটিক বা ম্যানুয়াল উভয় পদ্ধতিতেই করতে হতে পারে। সফটওয়্যারের বাগ এবং গ্লিচ খুঁজে বের করার কঠিন কাজটি মুলত আপনার ঘাড়ে থাকবে যদি আপনি এই পদে কাজ করতে চান।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কাজটি এমন যে আপনি যে কোন জায়গা থেকেই করতে পারেন, যদি আপনার কাছে প্রয়োজনীয় টুল গুলি থাকে। আপনার বাড়িতে যদি এই কাজ করার মত শক্তিশালী একটি কম্পিউটার আর প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার থাকে, তাহলে আর কষ্ট করে অফিসে যাবেন কেন?
আজই আপনার লাইন ম্যানেজারকে বলে অফিসের কাজ গুলো বাড়িতে বসেই করতে থাকুন আর মাস শেষে বুঝে নিন আপনার বেতন।
দুই.
এই তালিকার দুই নাম্বার জবটি হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার (Social Media Manager)। চাকরির জগতে এটা একটা উদীয়মান ক্ষেত্র। দিনে দিনে এই পদের কদর বাড়ছে, আর বেশি বেশি প্রতিষ্ঠানে এই পদ সৃষ্টি হচ্ছে।
এখন বড় বড় প্রায় সব ব্র্যান্ডেরই এই পদে এক বা একাধিক লোক রয়েছে। কোথাও আবার বড় আকারের আস্ত একটা ডিপার্টমেন্টই তৈরী করা হয়েছে কোম্পানির সোশ্যাল মিডিয়া দেখাশুনা করার জন্য।
একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে আপানার মূল দায়িত্ব হল, ইন্টারনেটের জগতে আপানার কোম্পানির ব্রান্ডকে সমুন্নত রাখা। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজাররা মুলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিজেদের কোম্পানির একক প্রতিনিধি হিসেবে নিজস্ব ব্রান্ডকে অন্যের সামনে তুলে ধরে থাকে। তাই এই কাজের গুরুত্ব অনেক এবং তা সরাসরি কোম্পানির সুনামের সাথে জড়িত।
আপনি যদি এই পদে কাজ করেন, তাহলে আপনাকে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহারে দক্ষ হতে হবে। কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে আপনি সমাজিক মাধ্যমে আসা সকল কমেন্টের উত্তর দেবেন, বিভিন্ন অনলাইন ক্যাম্পেইন বা প্রচারণা চালাবেন এবং নানা রকম আকর্ষণীয় কন্টেন্ট বানাবেন।
তবে একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, অনলাইনে কিভাবে কোম্পানির উপস্থিতি এবং সুনাম আরও বাড়ানো যায়, সে সম্পর্কে সবসময় কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের গাইড করা।
এই গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা কাজ করেন, তাদের বেশ কিছু পরিষ্কার লক্ষ্য থাকে। এই যেমন, ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বৃদ্ধি করা, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ব্যবহার করে ব্রান্ড সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, ইত্যাদি।
মনে রাখবেন, মাত্র কয়েক বছর আগেও সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার নামে কোন পদের অস্তিত্বই ছিল না!
আর এখন প্রায় সব কম্পানিতেই এই পদ রয়েছে। সুতরাং, কাস্টমার প্রবৃদ্ধি এবং তা ধরে রাখার জন্য এই পদের গুরুত্ব অপরিসীম এবং দিনে দিনে তা আরও বাড়ছে।
মার্কেটিং বা বিপণন পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে নিজ কোম্পানিকে সবসময় মানুষের সামনে সামাজিক মাধ্যমে উপস্থাপন করার এই কাজটি করার জন্য সবসময় আপনাকে অফিসে বসে থাকার প্রয়োজন নেই।
নিজ বাড়িতে বসেও আপনি এই কাজটি খুব ভালভাবেই করতে পারেন। আর এজন্য তেমন কোন দামি যন্ত্রপাতি বা সফটওয়্যারেরও দরকার হয় না। সাধারন মানের একটি কম্পিউটার আর নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই আপনি পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকেই এই কাজটি অনায়াসে করতে পারবেন।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কোন কোম্পানিতে কাজ করতে চান, তাহলে বাড়িতে বসেই সারা বছর কাজ করতে পারবেন। প্রতিদিন সকালে উঠে আর অফিসে দৌড়াতে হবে না, কেননা, আপনার অফিস তো এখন আপনার ঘরেই!
তিন.
আমার তালিকার শেষ অপশনটি হচ্ছে, ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট (Financial Analyst) বা অর্থনীতিক বিশ্লেষকের চাকরি। এটি একটি উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন কাজ। তবে এটি বাড়িতে বসেই করা যায়।
ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করাই ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্টের প্রধান কাজ। একজন ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট প্রতিনিয়ত স্টক, বন্ড এবং অন্যান্য বিনিয়োগ মাধ্যমগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে আর সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়।
যেহেতু এটি একটি উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন কাজ, তাই এই পেশার লোকেদের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে-
অতীত এবং বর্তমানের নানান financial data সার্বক্ষণিক পর্যালোচনা করা।
অর্থনীতি আর ব্যবসার গতি-প্রকৃতির উপর কড়া নজর রাখা
কোম্পানির financial statement পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং এর প্রকৃত মূল্যমান বের করা।
ঝুঁকি বিহীন বিনিয়োগের পরামর্শ দেয়া।
এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন লিখিত রিপোর্ট প্রস্তুত করা।
তো, এই কাজগুলো করার মত প্রয়োজনীয় দক্ষতা যদি আপনার থাকে, তাহলে আপনিও হয়ে যেতে পারেন একজন ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট।
যেহেতু কাজগুলোর সবই বাড়িতে বসেই করা সম্ভব তাই আপনি যদি এই পেশায় যোগ দেন, তাহলে আর আপনাকে প্রতিদিন সকালে অফিসে যেতে হবে না। নিজের বাড়িতে বসেই অফিসের সমস্ত কাজ করতে পারবেন প্রতিদিন।
আর আপনি যদি এরই মধ্যে এই পেশায় নিয়োজিত থাকেন, আর প্রতিদিন অফিসে বসে আপনাকে কাজ করতে হয়, তাহলে আজই আপনার লাইন ম্যানেজারের সাথে কথা বলুন আর চাকরিটাকে নিয়ে আসুন আপনার নিজের ঘরে।
বাড়িতে বসে করা যায়, এমন যদি আরও কোন প্রকৃত ফুল-টাইম চাকরির কথা আপনার জানা থাকে, তাহলে সেটা কমেন্ট করে আমাদের জানাতা ভুলবেন না।
বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত জানান।